ডেস্ক নিউজ:

কয়েকটি সরকারি দফতর ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আগামী ২৩ অক্টোবর মিয়ানমার সফরে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নিজেই এ তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটির সফর শেষে ২৫ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তারা (রোহিঙ্গারা) যাতে না আসে এজন্য একটা পদক্ষেপ মিয়ানমার সরকারকে নেয়ার জন্য অনুরোধ করব

মিয়ানমার সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের অনুরোধে আমি খুব সম্ভবত ২৩ তারিখ (অক্টোবর) মিয়নমার যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, অতিরিক্ত সচিব, বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) চিফ (মহাপরিচালক), কোস্টগার্ডের চিফ (মহাপরিচালক), নারকোটিকস ডিপার্টমেন্টের চিফকে (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক) সঙ্গে নিয়ে আমরা যাব।’

তিনি বলেন, আমাদের অমীমাংসিত কিছু এজেন্ডা ছিল সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। মূল যে এজেন্ডা, যেটার জন্য আমরা যাচ্ছি সেটা হলো আমাদের দেশে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া। কত তাড়াতাড়ি তাদের (রোহিঙ্গা) আমাদের দেশ থেকে নেয়া হবে সেটাই থাকবে আমাদের মূল এজেন্ডা।’

‘তাদের (মিয়ানমার সরকার) প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা এমন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন যাতে রোহিঙ্গারা নিজেদের আবাস ত্যাগ করে আমাদের এখানে আর না আসে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি এ সফরের মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি হবে। তারা (রোহিঙ্গারা) যাতে না আসে এজন্য একটা পদক্ষেপ মিয়ানমার সরকারকে নেয়ার জন্য অনুরোধ করব।’
নির্যাতনের শিকার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের এলাকাগুলো পরিদর্শন করবেন কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাইব, যদি তারা আমাকে অ্যালাউ করে আমি অবশ্যই যেতে চাইব।’

মূলত কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমার তাদের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তাদের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার যখন এসেছিলেন তখন চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলেছিলেন। এর মধ্যে তিনটি বিষয়ে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সই করা। একটি বিষয় ছিল ইনস্ট্রুমেন্ট হ্যান্ডওভার করা। এর চারটি তো রয়েছেই। এখন মূল এজেন্ডা যেটা সেটা নিয়ে আমাদের অ্যাম্বাসেডর সাহেব সেখানে কথাবার্তা বলছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক।’

ফিরিয়ে দেয়া মূল এজেন্ডা হলেও এখনও রোহিঙ্গারা আসছে, তাদের থামান যাচ্ছে না কেন- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘থামাচ্ছি না এটা কিন্তু সঠিক নয়। আমাদের বর্ডার গার্ড ও কোস্টগার্ড সেখানে (সীমান্তে) আছে, প্রতিনিয়ত তাদের নিরুৎসাহিত করছি, বাধা দিচ্ছি। এরপরও যখন এসেই পড়ে… তখন তাদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন এবং তাদের অবস্থা দেখে একটা মানবিক কারণে মাঝে মাঝে প্রবেশ করে। কিছু এলাকা আছে অত্যন্ত দুর্গম, সেই এলাকা দিয়েও এরা প্রবেশ করে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নতুন করে পাঁচ লাখ আসার আগে আরও পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে ছিল। বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরও কিন্তু তারা রয়ে গেছে। এখন টেকনাফ ও উখিয়ায় যে সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে তা থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা থেকে যাবেন তাদের সেখানে নিয়ে যাব। থেকে যাবে বলতে বোঝাচ্ছি, যারা (ফিরে যেতে) সময় নেবে, আমরা মনে করছি শিগগিরই (মিয়ানমারে ফিরে যাবে), যদি শিগগিরই না হয় তবে তাদের সেখানে (ভাষানচরে) সরাতে বাধ্য হব।’

একজন ফটো সাংবাদিক পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। পুলিশ কমিশনার আমাকে তাই জানিয়েছেন।’

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাবিরোধী কঠোর অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্তী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।